ইসলামে পবিত্রতার
গুরুত্ব
From
way to Jannah
ইসলাম একটি শ্বাশত জীবন
বিধান। জীবনের সকল দিকই আলোচিত হয়েছে ইসলামী শারীআহতে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম
যা পবিত্রতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে যা অন্য কোন ধর্মে নেই।কারণ ইসলাম
শুধুমাত্র ধর্মই নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
ইসলামে পবিত্রতার
গুরুত্ব অনেক তাই। কুরআন ও হাদীসে উযূ, মিসওয়াক, নাক সাফ করা, কুলি করা,
মাথামাসেহ করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, গোসল, আহারের নিয়ম, ইসতিঞ্জার বিধান
প্রভৃতি বেশ গুরুত্ব দিয়ে আলোচিত হয়েছে।
আভিধানিক অর্থে
পবিত্রতা বলতে ময়লা আবর্জনা থেকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়াকে বুঝায়। ইসলামী
শরীআহর ভাষায় পবিত্রতা বলতে যে কোন ভাবে ময়লা আবর্জনা সাফাই এবং মাটি বা পানি
কর্তৃক বিধানগত অপবিত্রতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝায়। মূলকথা, শরীয়াতের
পরিভাষায় পবিত্রতা বলতে সাধারণত সলাত, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদাতকর্ম
সম্পাদনে প্রতিবন্ধক অপবিত্রতা থেক নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝায়।
শরীআতের পরিভাষায় পবিত্রতা দুই প্রকার: অদৃশ্য ও দৃশ্য পবিত্রতা
অদৃশ পবিত্রতা: অদৃশ্য
পবিত্রতা বলতে শিরক বা পাপ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়। শিরক থেকে মুক্ত
হয়ে তাওহীদের বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং পাপ থেকে মুক্তি পূণ্যময় কর্মসম্পাদনের
মাধ্যমেই সম্ভব। দৃশ্যময় পবিত্রতার চেয়ে অদৃশ্যময় পবিত্রতাই অনেক অনেক
বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেছেন,
إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ
মুশরিকরা
একেবারেই অপবিত্র। (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-২৮)।
কিন্তু রাসূল (সা)
বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি কখনো অপবিত্র হতে পারেনা। ( বুখারী )।
তাই প্রতিটি মুসলিমের
উচিত নিজ আত্মাকে শিরক ও সন্দেহের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা। তা সম্ভব একমাত্র
তাওহীদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
দৃশ্যমান পবিত্রতা:
দৃশ্যমান পবিত্রতা বলতে
বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীন অপবিত্রতা থেক পবিত্র হওয়াকে বুঝায়। আর এটিই হচ্ছে
ঈমানের দ্বিতীয় অঙ্গ। রাসূল(সা) বলেন,
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।
( মুসলিম,হা/২২৩)।
ইসলামে
পবিত্রতার গুরুত্ব:
ইসলামে পবিত্রতার
গুরুত্ব এতই বেশী যে, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় ফারয করার পাশাপাশি এর পূর্বে উযূ
করা ফারয করা হয়েছে। সেই সাথে বলা হয়েছে যে পূর্ণাঙ্গরুপে উযূ করা না হলে সলাত
সুসম্পন্ন হয় না।যেমন এই হাদীসে নাবী কারীম (সা) বলেছেন,
আবু হুরায়রাহ (রা) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (স) বলেছেন, সে ব্যক্তির সলাত কবুল হয় না, যতক্ষণা সে
উযূ ভঙ্গের পর উযূ না করে। মিশকাত হাদীস নং-২৮০, বুখারী ও মুসলিম।
সেই সাথে পবিত্রতাকে
ঈমানে অর্ধেক বলেছেন। অন্য এক হাদীসে একে ঈমানের অংগও বলা হয়েছে। পবিত্রতা অর্জনের
মাধ্যম হিসেবে উযূ অন্যতম। উযূ এমন একটি পবিত্রতার মাধ্যম যা শুধুমাত্র দৈহিক
পবিত্রতা নয় সেই সাথে আত্মিক পবিত্রতা দেয়া যা অন্য কোন পদ্ধতিতে সম্ভব না। যেমন
কেউ যদি উযূর নিয়্যাতে না করে এমনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় আর কেউ যদি উযূর
নিয়্যাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় তবে এদের দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পবিত্রতায় আত্মিক
পবিত্রতাও যোগ হবে।
উযূর বিধান এতই
সাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞান সম্মত যে বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও তা মানুষকে অবাক করে
দেয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের পবিত্রতার বিধান নিয়ে আলোচিত হবে।উযূর
মধ্যে হাত ধৌত করা, পা ধৌত করা, নাক সাফ করা, গড়গড়াসহ কুলিকরা, মুখমন্ডল ধৌত
করা, মাথা মাসেহ করা, দাড়ি খিলাল করা প্রভৃতি স্বাস্থ্যসম্মত ।কারণ এসব অংগ
দিয়েই সবচেয়ে বেশী জীবনু প্রবেশ করে এবং তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এছাড়াও দাঁতের যত্নে
নাবী কারীম (সা) মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। যা দাঁতের রোগের সুরক্ষায়
বেশ প্রয়োজনীয়। নাবী কারীম (সা) বলেছেন যে যদি উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হতো
তাহলে মিসওয়াক ফারয করা হতো। তিনি ঘরে প্রবেশ করেই মিসওয়াক করতেন। মিসওয়াক
নাবীগণের সুন্নাত। গোসল করাকেও ইসলামে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শুক্রবারে গোসল
করাকে ওয়াযিব বলে গোষণা করা হয়েছে হাদীসে। ইসলাম এমনই জীবনবিধান যাতে প্রস্রাব
পায়খানার বিধিবিধানও উল্লে খ করা হয়েছে। যেখানে সেখানে প্রস্রাব করতেও নিষেধ করা
হয়েছে। যেমন গর্ত, চলাচলের পথে পায়খানা করতে নিষেধ করা হয়েছে।এমনকি নাবী কারীম
(সা) পায়খানা ও প্রস্রাব করে উযূ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।দাড়িয়ে প্রস্রাব করতেও
নিষেধ করা হয়েছে হাদীসে যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। বসে প্রস্রাব পায়খানা
করা নাবী কারীম (সা) এর সুন্নাত।উযূর সময় লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দেয়ার
নির্দেশ দিয়েছেন ।
এমনকি নাবী কারীম (সা)
ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও উযূ করে ঘুমানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং ঘুম থেকে উঠে প্রথমে
হাত ধৌত করার পর পানির পাত্রে হাত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মিশকাত শরীফের হাদীসে
রয়েছে, আবু আইয়ুব আনসারী, জাবির (রা) ও আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন এই আয়াত
নাযিল হয়,
فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
সেখানে
এমন লোকেরা রয়েছে, যারা পবিত্রতা লাভ করাকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ পবিত্রতা
লাভকারীকে ভালোবাসেন। ( সুরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-১০৯)।
তখন রাসূল (স) বললেন,
হে আনসারগণ! আয়াত দ্বারা আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা করলেন পবিত্রতার ব্যাপারে।
তোমাদের পবিত্রতা কী ? তাঁরা বললেন, আমরা নামাযের জন্য উযূ করে থাকি, নাপাক থেকে
গোসল করে থাকি এবং পানি দ্বারা শুচি লাভ করে থাকি। রাসূল (সা) বললেন, এরা তারা,
যাদের জন্য আল্লাহ প্রশংসা করলেন, সুতরাং তোমরা সর্বদা এ কাজ করতে থাকেব। ( ইবনে
মাজাহ)।
এমনকি নাবী কারীম (সা)
প্রস্রাব করার জন্য নরমস্থান পছন্দ করতে বলেছেন কেননা তা না হলে প্রস্রাব ছিটকে
এসে গায়ে লাগতে পারে।
খাবারের ক্ষেত্রে
পবিত্রতায় খাবার ঢেকে রাখতে এবং ডান হাতে খাবার খেতে আদেশ করেছেন।
বদ্ধপানিতে প্রস্রাব
করতে নিষেধ করেছেন। প্রস্রাব পায়খানার পর পানি বা ঢিলা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন
যা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। ডান হাতে শৌচকাজ করতে নিষেধ করেছেন কেননা আমরা ডান হাতে
খাবার খাই।
এছাড়াও মহিলাদের
হায়েয নিফাস, মাসিক, পুরুষদের স্বপ্নদোষের ক্ষেত্রেও পবিত্রতার বিধান বলে গেছেন
যেগুলো আমাদের জীবনে বেশ গুরুত্ব রাখে। এমনকি হাদীসে এসেছে নাভীর নিচের পশম
উপড়িয়ে বা কামিয়ে ফেলার যা পবিত্রতার একটি অংশ।
নখ দিয়ে যাতে জীবনু
প্রবেশ না করতে পারে এজন্য নাবী কারীম (সা) নখ বড় রাখতে নিষেধ করেছেন।উযূতে হাতের
ও পায়ের আঙ্গুল খিলাল করার প্রতি উত্সাহিত করেছেন। শৌচকার্য করার পর নাবী কারীম
সা: পানি দিয়ে মাটিতে ঘষে নিতেন যাতে জীবনু না লেগে থাকে। যে কথা এখন আমরা
বিজ্ঞানের কাছ থেকে শুনি যে, শৌচ কাজের পর সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে তা
চৌদ্দশত বছর আগে নাবী কারীম (সা) করে গেছেন।
এরকম আরো অনেক নির্দেশ
রয়েছে পবিত্রতার বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে।
পরিশেষে বলবো, ইসলাম
একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। যেখানে অপূর্ণাঙ্গ কোন কিছুর স্থান নেই। আর এজন্যই
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি এ কিতাবের মধ্যে সবকিছুই শামিল করে দিয়েছি। আর এটি মু’মিনদের
জন্য সুপথ ও রহমত স্বরুপ। আল্লাহ আমাদের কুরআন ও সুন্নাহর উপর চলার তাওফিক দিন।
No comments:
Post a Comment